ফুলতলা ছবির মত সুন্দর একটি উপজেলা। এটি খুলনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, কৃষি, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিখুঁত সমন্বয় এই উপজেলা। গ্রাম বাংলার যে রূপের বর্ণনা আমরা এতকাল কবিতার বইয়ের পাতায় পড়ে আসছি, এ যেন তারই বাস্তবিক রূপ। এই ফুলতলা এলাকার গাইডে, আমরা এই অঞ্চলটির অবকাঠামো, যোগাযোগ, সুযোগ সুবিধা, ইত্যাদি বিষয় এক্সপ্লোর করব।<br><br>
কৃষি এখানকার স্থানীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ধান, সবজি, পশুপালন এবং মাছ চাষ এই এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস। এ অঞ্চলে তিল ফসলের আবাদি জমির পরিমাণ অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। উন্নত যেগাযোগ ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহন, এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য পরিচিত, ফুলতলা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।<br><br>
তবে কেবল কৃষিতেই স্থিত হয়নি এই উপজেলা। এখানে আছে ১০ খানা জুট মিল। আছে লবণ, সার, ও প্যাকেজিং কারখানা। নার্সারী শিল্প, পাপড় ও গামছার জন্যও প্রসিদ্ধ এই অঞ্চল। এ উপজেলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্প নগরী। এছাড়াও চিংড়ি চাষ ফুলতলার বাসিন্দাদের আয়ের অন্যতম একটি প্রধান উৎস। ৮০০০ এরও বেশি চিংড়ি ঘেরে উৎপাদন ও রপ্তানি করা হচ্ছে গলদা, বাগদা, রুই ও অন্যান্য চাষযোগ্য মাছ।<br><br>
এই উপজেলার উত্তরে নোয়াপাড়া, পশ্চিমে মনিরামপুর এবং কেশবপুর, দক্ষিণে খুলনা সদর এবং বাটিয়াঘাটা উপজেলা, পূর্ব দিকে ভৈরব নদী এবং বারাকপুর। খুলনা সদর থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলাটি গ্রামীণ পটভূমি এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার একটি অসাধারণ সমন্বয় অফার করে। যশোর-খুলনা হাইওয়ে রোড দিয়ে মংলা, বেনাপোল এবং সুন্দরবনে সরাসরি যাতায়াত করা যায়।<br><br>
পদ্মা সেতু এবং রাস্তাঘাটের উন্নতির ফলে এই এলাকায় অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। যশোর-খুলনা হাইওয়ে, ফুলতলা-জামিরা রোড, ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন,এবং সিকিরহাট ফেরি ঘাট, এই উপজেলাকে সম্পূর্ণ খুলনা জেলা, এবং সারা দেশের সাথে সংযুক্ত করেছে।<br><br>
ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নে অবস্থিত হয়রত মিছরী দেওয়ান শাহের আস্তানা একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য, ঐতিহাসিক স্থান। ভৈরব নদী এবং শ্রী নদী এই অঞ্চলের প্রধান নদী যা প্রাণ দান করেছে এ জনপদে। এছাড়া ডাকাতিয়া বিলও এই উপজেলার একটি অংশ। ঐতিহাসিক মন্দির, মসজিদ, গণহত্যা স্পট ইত্যাদি ফুলতলার দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ফুলতলা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ১৯৭১ সালের গণহত্যার অনেক স্মৃতি স্তম্ভ রয়েছে।<br><br>
ফুলতলা উপজেলা ব্যস্ত বাজার, প্রাণবন্ত উৎসব এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আতিথেয়তার জন্যও পরিচিত। প্রশান্ত নদী, ঘাসফুলে মাঝারি পথ, উদ্যান এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা এখানে মনোরম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেয়। ভৈরব নদী, শ্রী নদী, সহ এই এলাকায় বেশ কিছু বিল এবং জলাশয় যা এলাকার পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বৈচিত্র ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
অন্তর্দৃষ্টি দেখুন