মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত মনোরম এবং প্রাণবন্ত একটি জেলা। বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিল্প, সংস্কৃতি সব দিক থেকেই জেলাটি গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা ও মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত হওয়ায়, এই জেলার কৃষি জমি খুবই উর্বর। এখানে আপনি গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং নগর উন্নয়নের মিশ্রণ দেখতে পাবেন।<br><br>
ভোজনরসিকদের কাছে মুন্সিগঞ্জ জেলা আলদির মাঠা বা ভাগ্যকূলের মিষ্টির জন্য জনপ্রিয় হলেও প্রাচীনকাল থেকে এ জেলা নানা কারনে বিখ্যাত ও লোকমুখে সুপরিচিত। বিক্রমপুর নামেও পরিচিত এই জেলাটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, এবং শরীয়তপুর জেলা দ্বারা বেষ্টিত। নদীমাতৃক এই জেলার আশেপাশে ও মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে প্রায় ১৪ টি নদী ও উপনদী, যার মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, ইত্যাদি।<br><br>
মুন্সীগঞ্জ সড়কপথ এবং নৌপথে সারা দেশের সাথে সংযুক্ত। ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে, মাওয়া-মুন্সিগঞ্জ হাইওয়ে, পদ্মা সেতু এবং মেঘনা সেতু এই জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে খুবই উন্নত করেছে। পদ্মা সেতু এবং মেঘনা সেতুর কারণে এই জেলাটি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জেলায় প্রচুর সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।<br><br>
এ জেলা অনেকটা কৃষিনির্ভর হলেও নগরায়ণ ও আধুনিকরনের ফলশ্রুতিতে চাকরি, ব্যবসা, আত্মকর্মসংস্থান, ইত্যাদি খাতও এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থায় প্রভাব ফেলছে। ধান, পাট এবং শাকসবজি এই এলাকার প্রধান ফসল। এছাড়াও মৎস্য চাষ, এবং কুটির শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। নদীমাতৃক জেলা হওয়ায় বর্ষাকালে নিচুস্থান সমূহ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মুন্সিগঞ্জের বাড়িগুলো বেশ উচুঁ করে নির্মিত হয়।<br><br>
এখানে অবস্থিত সোনারং জোরা মঠ প্রায় ২০০ বছর পুরানো। ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, মানা বে ওয়াটার পার্ক, মাওয়া ফেরি ঘাট, মাওয়া রিসোর্ট, প্রজেক্ট ইলিশ, পদ্মা সেতু ইত্যাদি এই এলাকার পর্যটক আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানকার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ইদ্রাকপুর কেল্লা, সোনারং টুইন টেম্পল, বাবা আদম মসজিদ, নাটেশ্বর বৌদ্ধ মন্দির, রায় বাহাদুর শ্রীনাথ রায়ের বাড়ি, ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ি, ইত্যাদি। এই এলাকার স্থানীয় খাবার, গান এবং নৃত্য স্বকীয়তা বজায় রেখেছে।<br><br>
গত কয়েক বছরে এখানকার রাস্তা ঘাটও বেশ উন্নত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে উঠেছে। তাছাড়া পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানের পর মুন্সিগঞ্জ জেলা ঢাকার সাথে অন্য বেশ কিছু জেলার যোগাযোগের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এক সময়ের প্রাচীন এই মুন্সিগঞ্জ বর্তমানে আধুনিক ও পরিবর্তনের অন্যতম নিদর্শন হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উপস্থিতি, এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ফলে এই জেলার আবাসিক এবং বাণিজ্যিক প্রপার্টির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
অন্তর্দৃষ্টি দেখুন